কৃপণতা : সফলতা আর সমৃদ্ধির জন্য এ বাধা দূর করতেই হবে-৩

Daily Inqilab মাওলানা শিব্বীর আহমদ

২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম

কার্পণ্য যেমনই হোক, যে স্তরেরই হোক, তা নিন্দনীয়। স্তরভেদে নির্ণীত হবে তার নিন্দার পরিমাণ। এ নিন্দা সমাজের মানুষের চোখেও, শরীয়তের দৃষ্টিতেও। নিরেট দুনিয়াবি বিষয়ে কার্পণ্যকেও শরীয়ত পছন্দ করে না। যার যেখানে যতটুকু ব্যয় করা দায়িত্ব, তা তো করতেই হবে। যাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা তার দায়িত্ব, তা করতে হবে। এমনকি এ দায়িত্বের বাইরেও ব্যক্তিগত ধর্মীয় কিংবা সামাজিক যে প্রয়োজনগুলো সামনে এসে হাজির হয় সেগুলোও সাধ্যমতো পূরণ করতে হবে।

নিজের, নিজের পরিবার-পরিজনের জন্যে সাধ্যমতো কিছুটা আরামের ব্যবস্থা করা, তাদের জন্যে একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা, নিজের অবস্থানুসারে গায়ের জামাটাও একটু ভালো হওয়া- এগুলো শরীয়ত অপছন্দ করে না। বরং ক্ষেত্রবিশেষে শরীয়তের নির্দেশনা এমনই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : অবশ্যই আল্লাহ স্বীয় বান্দার প্রতি তাঁর অনুগ্রহের নিদর্শন দেখতে ভালোবাসেন। (জামে তিরমিযী : ২৮১৯)।

তবে কথা হলো, সম্পদ ব্যয় করার আগে একটু ভেবে নিতে হবে- ব্যয়ের এ খাত শরীয়তের দৃষ্টিতে কাক্সিক্ষত কিংবা সমর্থিত কি না। শরীয়ত যেখানে অনুমোদন করে না, সমাজের নিন্দার চোখেও সেখানে সম্পদ ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে দান করে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে দান থেকে বিরত থাকে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে যে ভালোবাসে আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে যে ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্যেই যে বিয়ে দেয়, সে তার ঈমানকে পূর্ণ করল। (জামে তিরমিযী : ২৫২১)।

কোনো অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বিপদগ্রস্তকে সহায়তা করা- এসব তো ধর্ম ও সমাজ উভয় দৃষ্টিতেই পরম কাক্সিক্ষত বিষয়। এখানে যে পিছিয়ে থাকে, নিন্দার তীরে সে আক্রান্ত হবেই। অসুস্থকে যে সেবা করে না, অভাবীকে যে সাহায্য করে না, তার জন্যে কতটা ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে, খুবই পরিচিত একটি হাদিস। হাদিসের ভাষায় তা পড়ুন : কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আদমসন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি। সে বলবে, হে আমার প্রভু! আমি কীভাবে আপনাকে দেখতে যাব, আপনি যে বিশ্বজগতের প্রভু! তিনি বলবেন, তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল আর তুমি তাকে দেখতে যাওনি? তুমি কি জান না, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে তাহলে আমাকে তার কাছে পেতে?

হে আদমসন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে প্রভু! আমি কী করে আপনাকে খাওয়াব, আপনি তো রাব্বুল আলামীন! তিনি বলবেন, তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, তখন তুমি তাকে খেতে দাওনি? তুমি কি জান না, তুমি যদি তাকে খাওয়াতে, তাহলে তা আমার কাছে পেতে?

হে আদমসন্তান! আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি দাওনি। সে বলবে, হে প্রভু! কীভাবে আমি আপনাকে পানি পান করাব, আপনি তো সারা জাহানের প্রভু! তিনি বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি দাওনি। তুমি যদি তাকে পানি পান করাতে, তা আমার কাছে পেতে। (সহীহ মুসলিম : ২৫৬৯)।

আসলে আমরা ভয় পাই দারিদ্র্যকে। এ ভয় থেকেই আঁকড়ে থাকি আমাদের উপার্জিত সব সম্পদ। নিজের ভবিষ্যতের চিন্তা, সন্তানের ভবিষ্যত-চিন্তা ইত্যাদি আমাদেরকে সম্পদ ব্যয়ে নিরুৎসাহিত করে। অথচ হাদিস শরীফে উচ্চারিত হয়েছে একইসঙ্গে সুসংবাদ ও সতর্কবার্তা। একটি-যে সম্পদ ব্যয় করে তার জন্য, আরেকটি-যে সম্পদ জমিয়ে রাখে তার জন্য। লক্ষ্য করুন : প্রতিদিন সকালেই দুইজন ফেরেশতা নেমে আসে। তাদের একজন দুআ করে- হে আল্লাহ! যে সম্পদ ব্যয় করে তাকে আপনি এর বদলা দান করুন। অপরজন বলে- হে আল্লাহ! যে সম্পদ জমিয়ে রাখে তার সম্পদ ধ্বংস করে দিন। (সহীহ বুখারী : ১৪৪২)।

বোঝা যাচ্ছে, শুধু পরকাল নয়, দুনিয়ার জীবনের সমৃদ্ধির জন্যেও কার্পণ্যের এ দেয়াল টপকাতেই হবে। মুমিনের সফলতার জন্য এর বিকল্প নেই। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা : অন্তরের কার্পণ্য থেকে যাদেরকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম। (সূরা হাশর : ৯)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইসরাইলকে তথ্য দিতে গাজায় ব্রিটেনের ২০০ গোয়েন্দা ফ্লাইটের ১০০০ ঘণ্টা নজরদারি

ইসরাইলকে তথ্য দিতে গাজায় ব্রিটেনের ২০০ গোয়েন্দা ফ্লাইটের ১০০০ ঘণ্টা নজরদারি

এবার রাষ্ট্রীয় খরচে হজে যাচ্ছেন ৬৩ জন

এবার রাষ্ট্রীয় খরচে হজে যাচ্ছেন ৬৩ জন

রাজধানীতে জামায়াতের বিক্ষোভ

রাজধানীতে জামায়াতের বিক্ষোভ

ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যু ১০০ ছাড়িয়ে গেছে

ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যু ১০০ ছাড়িয়ে গেছে

একই গ্রাম থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত

একই গ্রাম থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত

ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন না : বাইডেন

ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন না : বাইডেন

ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী হলেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান

ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী হলেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান

“ইউক্রেনের কারাবন্দিরা যোগ দিতে পারবেন সেনাবাহিনীতে”

“ইউক্রেনের কারাবন্দিরা যোগ দিতে পারবেন সেনাবাহিনীতে”

গাজার আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মৃতদেহ উদ্ধার

গাজার আল-শিফা হাসপাতালে তৃতীয় গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মৃতদেহ উদ্ধার

২৫ বছর আগে খুন হওয়া চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর মামলার রায় আজ

২৫ বছর আগে খুন হওয়া চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর মামলার রায় আজ

জোট গঠনের সম্ভাবনা, কেন ইরানকে গুরুত্ব দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া?

জোট গঠনের সম্ভাবনা, কেন ইরানকে গুরুত্ব দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া?

ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটে বুড়িমারী এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত, পাঁচ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু

ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলরুটে বুড়িমারী এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত, পাঁচ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু

ইচ্ছাকৃতভাবে এইচআইভি ছড়ানোর অপরাধে ৩০ বছরের কারাদণ্ড মার্কিন যুবকের

ইচ্ছাকৃতভাবে এইচআইভি ছড়ানোর অপরাধে ৩০ বছরের কারাদণ্ড মার্কিন যুবকের

হায়দরাবাদে রাতভর বৃষ্টিতে শিশুসহ ৭ জনের মৃত্যু

হায়দরাবাদে রাতভর বৃষ্টিতে শিশুসহ ৭ জনের মৃত্যু

বেলগ্রেডে চীন ও সার্বিয়ার প্রেসিডেন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত

বেলগ্রেডে চীন ও সার্বিয়ার প্রেসিডেন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত

অবসরের দুদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হলেন ফারুকী

অবসরের দুদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হলেন ফারুকী

রাফাতে হামলা চালালে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি বাইডেনের

রাফাতে হামলা চালালে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি বাইডেনের

প্রথম ফ্লাইটে সউদী গেলেন ৪১৩ জন হজযাত্রী

প্রথম ফ্লাইটে সউদী গেলেন ৪১৩ জন হজযাত্রী

প্রধম ধাপে উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন যাঁরা

প্রধম ধাপে উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন যাঁরা

সিঙ্গাপুরের সামরিক বিমানঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

সিঙ্গাপুরের সামরিক বিমানঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত